কোরবানির ঈদের অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মূল
আয়োজন হলো বিভিন্ন রকমের মাংস। সবারই প্রবল ইচ্ছা বেশি বেশি মাংস খাওয়া।
খাবেন, কিন্তু চাই পরিমিতি জ্ঞান ও সংযম। চাই স্বাস্থ্য সচেতনতা।
কোরবানি ঈদের সচেতনতা নিয়ে পাঠকদের জন্য কিছু তথ্য দেয়া হলোঃ
১. লাল মাংস শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এ কথা সবারই জানা। লাল মাংস বা রেড
মিট, অর্থাৎ গরু বা ছাগলের মাংসে আছে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত
চর্বি, যা স্থূলতা বাড়ায়, রক্তনালিতে চর্বি জমায়, হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক
রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করে, রক্তচাপ বাড়ায়, ডায়াবেটিস জটিল করে তোলে, স্ট্রোক
ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার যেমন- কোলন
ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে এ লাল মাংসে। তাই ঈদে তো
লাল মাংসের নানা পদের সমাহার হবেই, তবে অপরিমিত অবশ্যই খাবেন না। বিশেষ করে
যারা স্থূলতা, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ বা হৃদরাগে ভুগছেন, তারা বিশেষভাবে
সাবধান থাকবেন। মনে রাখবেন, কোনো অবস্থায়ই দৈনিক খাদ্যতালিকায় চর্বিজাতীয়
খাদ্য যেন ৩০ শতাংশের বেশি না হয়। আর এর মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকবে
মাত্র ৭ শতাংশ।
২. যে চর্বি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শক্ত বা জমাট থাকে, সেটিই
স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি। লাল মাংস ছাড়াও ঘি, মাখন, মার্জারিন,
ক্রিম প্রভৃতিতে আছে এ সম্পৃক্ত চর্বি। তাই রান্নার সময় খেয়াল করুন কয়েকটি
জিনিস- মাংসের গায়ে যে সাদা জমাট চর্বি লেগে থাকে, তার পুরোটাই ছেঁটে ফেলে
দিন। রান্নায় ঘি, মাখন বা ডালডার ব্যবহার একে দ্বিগুণ ক্ষতিকর করে তুলবে।
রান্নায় তেল যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন।
৩. ট্রান্স ফ্যাট হচ্ছে আরেক ক্ষতিকর চর্বি, যা রক্তের এলডিএল বাড়ায় এবং
ভালো চর্বি এইচডিএলকে কমিয়ে দেয়। বেকারি ও রেস্তোরাঁয় ভেজিটেবল ফ্যাট জমাট
করার মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন হয়। দোকানের বেক করা খাবার ও ফাস্টফুডে
রয়েছে এ ট্রান্স ফ্যাট। তাই ঈদের খাবারে নানরুটি, কেক, পরোটা, ফ্রাই করা
খাবার, বার্গার, সসেজ, পিৎজা ও এ জাতীয় ফাস্টফুড পরিহার করাই ভালো।
৪. কোরবানির ঈদ বলেই সবজি বা মাছকে বিদায় জানাতে হবে- এমন কোনো কথা নেই।
বিশেষ করে, আঁশ বা ফাইবার এ সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আঁশজাতীয় খাবার চর্বি হজমে বাধা দেয় এবং কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের সবজি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই এ
সবজি অন্তর্ভুক্ত করুন। খাবার টেবিলে থাকুক প্রচুর পরিমাণে সালাদ বা কাঁচা
সবজি। ফ্রিজের মাছগুলো একেবারে অবহেলা করবেন না।
৫. নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটার উপকারিতা ভুলে যাবেন না এ ডামাডোলে। যে বাড়তি
ক্যালরি এ সময়ে গ্রহণ করছেন, তা পোড়াতে প্রচুর হাঁটুন। হেঁটেই না হয়
আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়ি দেখা করতে যান। সিঁড়ি ভাঙুন, ঘরের কাজে
সাহায্য করুন, পরিশ্রম করুন। বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার করতে নিজেই নেমে পড়ুন।
এতে উপকারই হবে বেশি।
৬. বেশির ভাগ লোকের, বিশেষ করে বয়স্কদের এ সময় গ্যাস্ট্রিক, আলসারের ব্যথা
এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যায়। কারণ সেই পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস। এ সমস্যা
এড়াতে কম তেল, কম মশলা ও কম মাংস খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রয়োজনে
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ চেয়ে নিন চিকিৎসকের কাছ থেকে। কোষ্ঠ পরিষ্কারের জন্য
প্রতিদিন প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার খান।
৭. গেঁটে বাত বা ইউরিক এসিড বেশি যাদের এবং যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে,
তাদের জন্যও মাংসের আমিষ ক্ষতিকর। তারা অবশ্যই চিকিৎসক কর্তৃক বরাদ্দকৃত
আমিষের চেয়ে বেশি পরিমাণে আমিষ খাবেন না। তাতে বিপদ হতে পারে।
৮. কোরবানির পর স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করুন। যত দ্রুত সম্ভব
বাড়ি এবং এর আশপাশ পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করে ফেলুন। রাস্তার ওপর এবং
যত্রতত্র কোরবানি দিয়ে রক্ত ও আবর্জনা ফেলে রাখবেন না। নির্দিষ্ট স্থানে
গর্ত করে আবর্জনা ও রক্ত ফেলা নিশ্চিত করুন। জীবাণুনাশক পাউডার, ডেটল ও গরম
পানি ব্যবহার করুন।
যাদের এনালফিশার ও পাইলস জাতীয় রোগ আছে, তাদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা
ইত্যাদি বাড়তে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের
ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন। দাওয়াতে গেলে, অতিভোজন পরিহার
করার চেষ্টা করবেন। হয়তো অনেক খাওয়া-দাওয়া টেবিলে সাজানোই থাকবে, কিন্তু
খেতে বসলেই যে সবই খেতে হবে, তা নয়। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবেন না,
এতে হজম রসগুলো পাতলা হয়ে যায়। ফলে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত এক
ঘণ্টা পর পানি খাবেন।
0 comments:
Post a Comment